রিদ্দার যুদ্ধ। হযরত আবু বকর রাঃ এর খেলাফতের রিদ্দার যুদ্ধ।


ridda war, ridda wars, causes of ridda wars, battle of yamama, ridda meaning, ridda name meaning, ridda wars map, ridda wars wiki, ridda wars islam, war of ridda, what is ridda war, effects of ridda war, islamic blog bangla, ridda wars pdf, ridda wars in urdu, causes of ridda war, ridda wars brown.edu, the ridda war, what is ridda wars in urdu, ridda wars shia, ridda wars shia view, ridda wars reddit, ridda wars islamqa, ridda wars meaning in urdu, ridda wars abu bakr

রিদ্দার যুদ্ধের কাহিনী এবং ইসলামিক ইতিহাস।

রিদ্দার যুদ্ধ (সূচনা)

খলিফা আবু বকর রাঃ এর শাসনামলে ৬৩২ থেকে ৬৩৩ খ্রিঃ এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়।এই যুদ্ধ করা হয়েছিলো ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে। আরব গোত্র গুলো তখন বিদ্রোহ শুরু করেছিলো। তারা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর অনুগত ছিলো কিন্তু আবু বকর (রাঃ) এর অনুগত্য তারা অস্বীকার করছিলো। বিদ্রহীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রাঃ) যেই যুদ্ধগুলো পরিচালনা করেন সেগুলোই হলো রিদ্দার যুদ্ধ। এই বিদ্রোহীরা তুলায়হা, ‍মুসায়লিমা ও সাজাহা নামক তিন জন ভন্ড নবীর ধোকায় পড়ে। এই ভন্ড নবীরা একে একে মুসলিম বাহিনির কাছে পরাজিত হয়। তবে মক্কার আশেপাশের অধিবাসীরা বিদ্রোহ করেনি।

৬৩২ খ্রিঃ মে মাসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) রোমান সম্রাজের বিরুদ্ধে বড় অভিযানের নির্দেশ দেন। এই অভিযানের পরিচালনার নেতৃত্ব দেন উসামা ইবনে জায়েদকে । এই বাহীনীতে ছিলো ৩০০০ মুসলমান। এই বছরের জুন মাসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মৃত্যুবরণ করেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) তার খলিফা নির্বাচিত হন। হযরত আবু বকর (রাঃ) দ্বায়িত্ব গ্রহণের পরেই উসামা ইবনে জায়েদ (রাঃ) কে অগ্রসর হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

অগ্রসর হওয়ার আগে উসামা ইবনে জায়েদ উমর ইবনুল খাত্তাবকে আবু বকরের কাছে পাঠান এবং বলেন:

খলিফার কাছে যান, তাকে বলুন যাতে সেনাদের মদিনায় অবস্থান করার অনুমতি দেয়া হয়। সব নেতা আমার সাথে রয়েছে। যদি আমরা চলে যাই তবে কাফিরদের মদিনাকে টুকরো করে ফেলা প্রতিহত করার মত কেউ থাকবে না।

তবে আবু বকর এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করার জন্য তিনি তার নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। ৬৩২ সালের ২৬ জুন উসামার সেনারা সামনের দিকে এগোতে শুরু করে। তারা মদিনা ত্যাগ করে তাবুকের দিকে আগ্রসর হয়। এই অঞ্চলের অধিকাংশ গোত্র তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সেনাদের কাছে তারা পরাজিত হয়। এর পরে উসামা ইবনে জায়েদ উত্তর আরবে অভিযান পরিচালনা করেন এবং কুজা থেকে শুরু করে দুমাতুল জান্দালের দিকে এগিয়ে যান।

এর পরে কিছু গোত্র মদিনায় আনুগত্য স্বীকার করে নেয় এবং তারা পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। কিন্তু কুজা গোত্র বিদ্রোহী থেকে যায়। আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর কাছে কুজা গোত্র পরাজিত হওয়ার পরে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এই অভিযান গুলো শেষে করে উসামা মুতার দিকে যেতে শুরু করেন। এদিকে ছিলো বনু কালব এবং গাসনীয় খ্রিষ্টান আরবদের আক্রমণ করেন। বন্দী ও সম্পদসহ উসামা মদিনায় ফিরে আসেন। সোনারা মদিনায় ফিরে আসেন। তারা মাত্র ৪০ দিনের জন্য মদিনার বাইরে ছিলো।

মদিনার প্রতিরক্ষা

মদিনার নিকটের বিদ্রোহীরা দুইটি স্থানে সমবেত হয়। এরা ছিলো যাথাক্রমে ২৪ মাইল পূবে যুকিসা ও ৭২ মাইল উত্তর পূর্বে আবরাক অবস্থান করছিলো। বুন গাতাফান, হাওয়াজিন ও তায়ি গোত্র এতে নিয়োজিত ছিলো। হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রতিপক্ষ গোত্রগুলোর কাছে ইসলামের প্রতি অনুগত ও জাকাত প্রদান করতে আহ্বান জানিয়ে দূত প্রেরণ করেছিলেন।

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) এর বাহিনী যাত্রা করার দুই-এক সপ্তাহর মধ্যে মদিনায় অল্প সেনা আছে এই খবর পেয়ে বিদ্রোহী গোত্রগুলো মদিনাকে ঘিরে ফেল্ল। অপরদিকে যুকিসারর বিদ্রোহীদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে ভন্ড নবী তুলায়হা। ৬৩২ সালের জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই বিদ্রোহীরা যুকিসা থেকে যুহুসায় যাত্রা করে এবং এখান থেকেই মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে গোয়েন্দা মারফত খবর পান এবং মদিনার প্রতিরক্ষার জন্য সেনাবাহীনি তৈরি করতে পারেন। তিনি সেনা সংগ্রহের জন্য হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর গোত্র বনু হাশিম গোত্র থেকে লস্কর সংগ্রহ করতে থাকেন। এই বাহিনীতে ছিলেন হযরত আলী (রাঃ), হযরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ এবং ‍হযরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাঃ) এর মতো সাহাবীরা ছিলেন। এই তিনজন নবগঠিত সেনাবাহিনীর এক তৃতীয়াংশ পরিচালনা করার দ্বায়িত্ব পায়। খলিফা বিদ্রোহীদের উপর আক্রমন করে তাদেরকে যুহুসায় তাদের ঘাটিতে ফেরত পাঠায়।

পরের দিন হযরত আবু বকর (রাঃ) মূল বাহিনীকে সাথে নিয়ে মদিনা থেকে অগ্রসর হন এবং যুহুসার দিকে এগিয়ে যান। তাদের উটগুলো যোদ্ধা উট ছিলো না। ‍মুসলিম বাহিনীর সকল যোদ্ধা উটগুলো ছিলো হযরত উসামা (রঃ) এর বাহিনীর সাথে। যখন বিদ্রোহী নেতা হিবাল মুসলিমদের উপর আচমকা আক্রমন করে তখন এই উটগুলো চমকে যায়। কারন এই উটগুলো যুদ্ধ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলো না। এর ফলে মুসলিম বাহিনীকে পিছু হটতে হয়। বিদ্রোহীরা তাদের হারানো ঘাটি ফিরে পায়। মদিনায় হযরত আবু বকর (রাঃ) পুনরায় বাহিনী গঠন করেন এবং রাতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ করেন। বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সকালে হযরত আবু বকর (রাঃ) তার বাহিনীদের যুকিসার দিকে অগ্রসর করেন। এই যুদ্ধে বিদ্রোহীদের পরাজয় হয় এবং যুকিসা দখল করা হয়। দিনটি ছিলো ৬৩২ খ্রিঃ ১লা আগস্ট। পরাজিত বিদ্রোহী গোত্রগুলো আবরাকের দিকে পিছু হটে। আবরাকে গাতাফান,হাওয়াজিন এবং তায়ি গোত্রের লোকেরা জমায়েত হয়েছিল।

৬৩২ সালের আগস্ট উসামার বাহিনী মদিনায় ফিরে আসে। তারা ৪০ দিন মদিনার বাইরে ছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত উসামা (রাঃ) সেনাদের মদিনায় বিশ্রাম নেয়ার আদেশ দেন এবং বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করার জন্য তাদের অস্ত্রসজ্জিত করেন।

ইতিমধ্যে ৬৩২ সালের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে তার সেনাবাহিনীসহ যুকিসার দিকে অগ্রসর হন। নুমান ইবনে মাকরানের অধীন সেনাদের নিজের কমান্ডে এনে তিনি আবরাকের দিকে অগ্রসর হন। বিদ্রোহীরা পিছু হটে এখানে জমায়েত হয়েছিল। তিনি তাদের পরাজিত করেন। বাকি বিদ্রোহীরা বুজাকার দিকে পিছু হটে। তুলায়হা এখানে তার বাহিনীসহ সামিরা থেকে এসেছিল।

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর যুদ্ধের কৌশল

৬৩২ সালের আগষ্টের চতুর্থ সপ্তাই হযরত আবু বকর (রাঃ) পুরো সেনাবাহীনি নিয়ে যুকিসার দিকে যাত্রা শুরু করেন। এই স্থাতে হযরত আবু বকর (রাঃ) আরবের সর্বস্তরের বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে বিদ্রোহীদের ঘাটিগুলো যুকিসা এবং আবরাকে তার অংশ নেয়া যুদ্ধগুলো ছিলো মদিনা রক্ষা ও শত্রুদের আরো এগিয়ে আসা ঠেকানোর লড়াই ছিলো। এর কারনে হযরত আবু বকর (রাঃ) সামনে আরো বড় অভিযানের জন্য ভিত্তিভূমি সুরক্ষা করতে সক্ষম হয় এবং তার মূল বাহিনীকে চালনার জন্য সময় পেয়ে যান। এই সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) এর বেশ কয়েকজন প্রতিপক্ষ ছিলো। এরা বুজাকার তুলায়হা, বুতাহের মালিক বিন নুয়াইরা, ইয়ামামার মুসায়লিমা। এই বিদ্রোহী ও ভন্ড নবীরা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হয়। তারা ওমান মাহরা, হারামাওত ও ইয়েমেনে তারা বিদ্রোহ করে।

হযরত আবু বকর (রাঃ) কয়েকজন যোদ্ধা ও বীর সাহাবীকে নিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক ও শক্তিশালী দলটি ছিল হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এর বাহিনীতে। হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এর বাহিনী প্রথমে অপারেশনে যেতো। এর পরে বাকীরা তার অনুসরণ করতো। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর পরিকল্পনা ছিলো মালিক ইবনে নুয়াইরার মোকাবেলা করা এবং শেষে ভন্ড নবী এবং সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী মুসায়লিমার মোকাবেলা কর। এই ভন্ড নবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধ হয় এবং ভন্ডনবীকে হত্যা করা হয়। এই যুদ্ধে অনেক হাফেজ সাহাবী শাহাদত বরণ করেন।

যুদ্ধের বীর সেনাপতিদের তালিকা

অভিযান পরিচালনার জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) ১১টি দল গঠন করেন এবং প্রত্যেকের দলনেতা ছিলো। নিম্নে ১১জন সেনাপতির নাম দেওয়া হলোঃ

·         হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)

·         ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল

·         আমর ইবনুল আস

·         শুরাহবিল ইবনে হাসানা

·         খালিদ ইবনে সাইদ

·         তুরাইফা বিন হাজিজ

·         আলা বিন আল হাদরামি

·         হুজায়ফা বিন মিহসান

·         আরফাজা বিন হারজামা

·         মুহাজির বিন আবি উমাইয়া

·         সুয়াই বিন মুকারান

সেনাপতিদের অভিযান এবং তারে প্রতিপক্ষ সমূহঃ

খালিদ বিন ওয়ালিদ প্রথমে বুজাখার আসাদ গোত্রের তুলায়হা বিন খুওয়াইলিদ আল আসদি পরে বুতাহর মালিক বিন নুয়াইরা। মুসায়লিমার সাথে লড়াই করার জন্য ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল কে পাঠানো হয়। তাবুক দুমাতুল জান্দালের কুজা ওয়াদিয়া গোত্রের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) কে প্রেরণ করা হয়। শুরাহবিল ইবনে হাসানা (রাঃ) ইকরিমা (রাঃ) কে অনুসরন করতে থাকে এবং খলিফার আদেশ আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়। সিরিয়ার সিমান্তে কিছু বিদ্রোহী গোত্র ছিলো। তাদেরকে দমনের জন্য পাঠানো হয় সেনাপতি খালিদ বিন সাইদ (রাঃ) কে। মদিনা ও মক্কার হাওয়াজিন এবং বনি সুলাইয়ামানের বিদ্রোহী গোত্রকে দমন করার জন্য পাঠানো হয় তুরাইফা বিন হাজিজকে। বাহারাইন, ওমান এবং মাহরার বিদ্রোহীদের জন্য যথাক্রমে আলা বিন আল হাদরামি, হুজায়ফা বিন মিহসান, আরফাজা বিন হারজামা। ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) মুহাজির বিন আবি উমাইয়া এবং সুয়াই বিন মুকারান দের প্রেরণ করেন।

সেনাদল গঠন সম্পন্ন হওয়ার পর খালিদ এগিয়ে যান। এর কিছু পর ইকরিমা আমর ইবনুল আস তাকে অনুসরণ করেন। অন্যান্য সেনাদলগুলো খলিফার অধীনে ছিল। পরের সপ্তাহ মাসগুলোতে এদের প্রেরণ করা হয়। শত্রুদের শক্তিশালী অবস্থানের ব্যাপারে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) অপারেশনের উপর এদের প্রেরণ নির্ভর করত।

বিভিন্ন সেনাদলের যুকিসা ত্যাগ করার আগে আবু বকর বিদ্রোহী গোত্রগুলোর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য চূড়ান্ত আহ্বান জানান।

রিদ্দার যুদ্ধে কমান্ডারদেরকে দেওয়া নির্দেশনা সমূহঃ

যেই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিলোঃ

যে সকল গোত্র যে সকল কমান্ডারের উদ্দেশ্য ছিল তাদের অনুসন্ধান এবং অবস্থান নির্ণয় করা। যুদ্ধের আগে মুসলিম বাহীনি আজান দিতো। যদি বিদ্রোহী গোত্রগুলো আজানের ধ্বনি শুনে উত্তর দিতো তাহলে তাদের আক্রমণ করা নিষেধ ছিলো। এর পরে গোত্রগুলোকে জাকাত প্রদানের আহ্বান করে আত্মসমর্পণ করাতে হবে। যদি তারা জাকাত প্রদানকে মেনে নেয় তাও তাদের উপর আক্রমন করা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না।

তাছাড়াও যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

যুদ্ধ করার আদেশ ছিলোঃ

যারা আজানের উত্তর দিবেনা এবং আত্মসমর্পণ করবে না তাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা ব্যাবহার করতে তথা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সাথে যারা মুসলমানদেরকে হত্যা করেছিলো তাদেরকে হত্যা করতে বলা হয়েছিল। এই সব নির্দেশনা সহ মুসলিম বাহিনীকে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন হযরত আবু বকর (রাঃ)

যুদ্ধসমূহঃ

বুজাখা

বুজাখা ছিল বিদ্রোহী তুলায়াহার বিরুদ্ধে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এর সংগঠিত যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তুলায়হা এবং তার মিত্রগোষ্টিরা মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর প্রস্তুতের খবর পেয়ে তুলায়হা এবং তার মিত্র গোত্রগুলো প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এমতাবস্তায়, বনি আসাদ ও গাতাফান গোত্র তুলায়হার সাহায্যে এগিয়ে আসে। এই দুই গোত্রও ছিলো বিদ্রোহী গোত্রর মধ্যে অন্যতম। খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) বিদ্রোহীদের শক্তি হানি করার পথ খুজতে থাকে। তুলায়হাকে কিছু গোত্র সাহায্য করলেও তায়ি গোত্র তুলায়হার সমর্থন থেকে বিরত থাকে। এর কারন এই গোত্রের নেতা আদি ইবনে হাতিম ছিলেন মুসলমান। খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) আদিকে গোত্রের প্রধানদের সাথে আলোচনা করার জন্য পাঠায় যাতে তারা আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হয় এবং তুলায়হার বাহিনী থেকে ফিরে আসে। এই আলোচনা ফলপ্রসু হয়। আদি ইবনে হাতিম তার গোত্র থেকে ৫০০ জন ঘোরসওয়ারকে খালিদের বাহিনীতে যোগ দান করায়। এর পরে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বিদ্রোহী গোত্র জাদিলার দিকে অগ্রসর হন। জাদিলা গোত্র আত্মসমর্পণ করে এবং এক হাজার যোদ্ধা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এর ফলে মুসলিম বাহিনীর শক্তি সঞ্চয় হয়।

এর পরে মুসলিম বাহিনী হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে বুজাখার দিকে যাত্রা শুরু করে। অবশেষে ৬৩২ খ্রিঃ সেপ্টেম্বরের মাঝখানে তুলায়হার সাথে বুখাজার যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

এই যুদ্ধে তুলায়হার পক্ষে ছিলো ১৫,০০০ সৈন্য এবং হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর ছিলো মাত্র ৬,০০০ সৈন্য। এই যুদ্ধে তুলায়হার ব্যাপক ক্ষতি হয়। মুসলিমদের হতাহতের সংখ্যা ছিলো স্বল্প।

যুদ্ধের শুরুতে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) দন্দ যুদ্ধের জন্য তুলায়হাকে আহ্বান করে কিন্তু তুলায়হা তার সাথে যুদ্ধ করেনি। পরে তার বাহিনী নিয়ে মুসলিম বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু করে দেয়। যুদ্ধে তুলায়হা পরাজিত হয় এবং তাকে বন্দি করে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নিকট পাঠিয়ে দেয়। অতপর তুলায়হা মাফ চাইলে তাকে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাকে ক্ষমা করে দেয়।

এই যুদ্ধে যেই সকল সেনা অবশিষ্ট থাকে তারা গামরার দিকে অগ্রসর হয়।

গামরার যুদ্ধ

যারা বুজাখার যুদ্ধে পিছু হটে ছিলো তারা গামর নামক স্থানে মুসলিম বাহিনীর সম্মুখিন হয়। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীরা ৬৩২ খ্রিঃ  সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয় হয়। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর বিজয়ের সংবাদ পাওয়া পরে কিছু গোত্র হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নিকট আত্মসমপর্ণ করে। এর পরে যথাক্রমে নাকরার যুদ্ধ ও জাফারের যুদ্ধ হয়।

নাকরার যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বিজয় হন। এবং মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে জাফারের দিকে অগ্রসর হন।

জাফারের যুদ্ধ

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) গামারা এবং নাকরার যুদ্ধে বিজয় লাভ করে জাফারের দিকে অগ্রসর হয়। এই যুদ্ধটি ৬৩৩ সালে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এবং বিদ্রোহী নেত্রী সালমার মধ্যে সংগঠিত হয়। জাফারের যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর প্রতিপক্ষ ছিলো বিদ্রোহী গোত্রের নেত্রী সালমার মধ্যে সংঘটিত হয়। বিদ্রোহী নেত্রী সালমা একটি উটে চড়ে এতে অংশ নেয়। উটের চারপাশে দেহরক্ষীরা ছিল। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে সালমা এবং তার দেহরক্ষীদের হত্যা করেন। এই যুদ্ধে কয়েকশত বিদ্রোহী নিহত হয়।

এই যুদ্ধে সালমার বাহিনীর প্রচুর ক্ষতি হয়। মুসলিমরা স্বল্প কিছু ক্ষতির মাধ্যমে বিজয় লাভ করেন। জাফারের যুদ্ধ শেষ হলে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) নাহদ এর দিকে অগ্রসর হন।

 

 

নজদ

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর একের পরে এক বিজয়ের কারনে প্রায় সকল গোত্রই আত্মসমপর্ণ করে। কিন্তু কিছু কিছু গোত্র বাদ ছিলো। এদের মধ্যে বনু তামিমের গোত্র অন্যতম। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর বিরুদ্ধে তারা অগ্রসর হয়। কিন্তু বনু তামিমের একটি শাখা গোত্র বনু ইয়ারবু এর নেতা মালিক ইবনে নুওয়ায়রা তার শাখা গোত্র নিয়ে যুদ্ধ থেকে সরে আসে। এই মালিক ছিলো একই সাথে কবি, যোদ্ধা এবং উদার ফলে আরবদের কাছে তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ।  

মালিক ইবনে নুওয়ায়রা-কে নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় বনু তামিম গোত্রের যাকাত সংগ্রাহক ছিলেন। কিন্তু নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পরে সে বিদ্রোহী হয়ে যায় এবং সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে। এর ফলে সে নবীজীর মৃত্যুর খবর শোনার পরেই তার সংগৃহীত যাকাত গুলো গোত্রের লোকেদের ফেরত দিয়ে দেই।

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) জানতে পারে যে মালিক ইবনে নুওয়ায়রা ভন্ড নবী সাজাহর সাথে চুক্তি করে এবং মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গিকার করে। কিন্তু নাজাদে গিয়ে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কোন বাহিনী দেখতে পারলো না। এর ফলে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) তিনি অশ্বারোহীদেরকে খবর নেওয়ার জন্য কাছের গ্রামে পাঠাই এবং দেখা হলে খলিফার নির্দেশ মোতাবেক তাদের উদ্দেশ্যে আজান দিতে বলে।

মুসলিম বাহিনী আজানের উত্তর শুনতে না পেরে মালিক ইবনে নুওয়ায়রা পরিবারকে জিরান বিন আজওয়ার গ্রেফতার করেন। পরে মালিক জাকাত দিতে অস্বীকার করায় এবং নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করায় তাকে বিদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। একই সাথে স্বঘোষিত এবং ভন্ড নারী নবী সাজাহার সাথে চুক্তি করে খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) তার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে বিতর্কের জন্ম হয়।

 

ইয়ামামা

রিদ্দার যু্দ্ধ চলার সময় সবচেয়ে গুরুত্ব এবং ভয়াবাহ যুদ্ধটি হয় ইয়ামামার যুদ্ধে ভন্ড নবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে আবু হুজাইফা (রাঃ) সহ ৭০০ কোরআনের হাফেজ শহীদ হয় যার কারনে পরবর্তীতে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) আল-কোরআন সংঙ্কলন করেন।

ইয়ামাময় মুসাইলামার সাথে সাক্ষাতের জন্য ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল কে আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তার সেনা সংখ্যা মুসাইলামার সাথে যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনীটি ছিলো মুসায়লামার। ইয়ামামায় হযরত ইকরিমা ইবনে আবু জাহেলকে নিয়োগ দেওয়া হয় যাতে মুসায়লামা ইয়ামামায় বন্দি অবস্থায় থাকে। মূল যুদ্ধ শুরু হয় যখন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) অন্যসকল যুদ্ধে বিদ্রোহীদের দমন করে বিজয়ী হয় ইয়ামামায় আসেন।

ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল তার শিবির থেকে বনু হানিফা গোত্রের উপর নজর রাখেন। তার পরে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ভন্ডনবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কে ইয়ামামায় প্রেরণ করেন।

মুসায়লামা ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল (রাঃ) এবং শুরাহবিল ইবনে হাসানাকে পরাজিত করে। পরে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) শুরাহবিল ইবনে হাসানা রাঃ কে চিঠি দিয়ে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর সেনা দলে যোগ দিতে বলেন। এই চিঠি পাওয়ার পরে শুরাহবিল ইবনে হাসানা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর অধীনে যোগ দেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বুতার দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে পুরোনো সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হন। এর পরে তিনি ইয়ামামার দিকে অগ্রসর হন। ৬৩২ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে ইয়ামামার যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

ভন্ডনবী ‍মুসায়লামা আকরাবার সমভূমিতে ঘাটি গাড়ে। তার সেনাবাহিনীতে ৪০,০০০ এর বিশাল সৈন্য বাহিনী ছিলো। অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীতে ছিলো ১৩,০০০ সৈন্য। কিন্তু মুসলিম বাহিনী এই বিশাল বাহিনী দেখে ভয় পাননি। কারন তারা ছিলো ইমানের বলে বলিয়ান। তারা তো কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করেই তলোয়াল চালাই।

এই যুদ্ধ অনেক ভয়াবাহ ছিলো। এই যুদ্ধে দুই পর্যায়ে শেষ হয়। প্রথমে যুদ্ধ চলার সময় মুসলিমরা পুরো শক্তি নিয়ে আক্রমন করে। অনেক সাহাবী শহীদ হন। এর পরে যুদ্ধ ভারসম্য অবস্থায় চলে আসলে মুসায়লামার বাহিনীর মাত্র এক চতুর্থাংশ টিকে ছিলো এবং তারা পিছু হটে একটি দেওয়াল ঘেরা বাগানে আশ্রয় নেয়। সেখানে আরো ৭,০০০ বিদ্রোহী মুসায়লামার সাথে যোগ দেয়।

যেহেতু বাগানটি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল আর তাই মুসলিম বাহিনী সেখানে ঢুকে যুদ্ধ করতে সক্ষম ছিলেন না। এমতাবস্থায় আল বারা ইবনে মালিক তার অনুসারীদের আহ্বান জানায় যে তাকে দেওয়াল টপকাতে সাহায্য করতে। তিনি দেওয়াল টপকাতে সক্ষম হন এবং মুসলমানদের জন্য বাগানের দেওয়ালের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে মুসলিম বাহিনী বাগানে প্রবেশ করে যুদ্ধ করতে সক্ষম হন। এর পরে বাগানের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধটি শুরু হয়। মুসায়লামা তখনও যুদ্ধ করছিলো। যুদ্ধ চলার সময় হাবশি সাহাবী ওয়াহশি ইবনে হারাব এক আনসারী সাহাবীর সাহায্যে মুসায়লামাকে দেখতে পান এবং তার হাতে থাকা বর্শা (যা দিয়ে হযরত হামজা (রাঃ) কে শহীদ করেছিলেন ওহুদের যুদ্ধে সেই একই বর্শা দিয়ে।) দিয়ে মুসায়লামাকে হত্যা করেন। এর ফলে মুসায়লামার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। পরে সকল বিদ্রোহীরা যুদ্ধে নিহত হয়।

এই যুদ্ধর পরে আরবের প্রায় সকল বিদ্রোহীদের পতন হয়। এই যুদ্ধে অলৌকিক ভাবে সাফ ইবনে সাইয়্যাদ নিখোজ হয়ে গেছিলো।

 

 

দাবার যুদ্ধ (ওমানের বিদ্রোহী দমনের যুদ্ধ)

৬৩২ খ্রিঃ এর মধ্য সেপ্টেম্বরে ওমানের বিদ্রোহীদের ‍দাবার যুদ্ধের মাধ্যমে দমন করা হয়। ওমানে বিদ্রোহ দেখা দিলে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) হুজায়ফা বিন মিহসান (রাঃ) কে ওমানে পাঠান। সেখানে আজদ গোত্র তাদের নেতা ‍লাকিত বিন মালিকের অধীনে বিদ্রোহ করেছিলো। হুজায়ফা ওমানে প্রবেশ করার পরে যুদ্ধ না করে অপেক্ষা করতে থাকে। কারন তার সৈন্য সংখ্যা যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট ছিল না। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তিনি যখন খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) কে চিঠি লিখেন এবং এই সম্পর্কে খলিফাকে জানান তখন খলিফা ইকরিমা ইবেন আবু জাহেল কে সেখানে পাঠান সাহায্য হিসেবে। ইকরিমা এবং হুজায়ফা বিন মিহসান (রাঃ) সেখানে এক সাথে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হন।

মুসলিম বাহিনী লাকিত বিন মালিককে দাবার প্রান্তরে পান এবং সেখানে তাদের সাথে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হন এবং লাকিত বিন মালিক যুদ্ধেই নিহত হয়। এর পরে হুজায়ফা বিন মিহসান (রাঃ) ওমানের গর্ভনর নিযুক্ত হন এবং ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল দাবা অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার আজদ গোত্রের বিদ্রোহীদের পরাজিত করে ওমানের বিদ্রোহী দমন করেন।

 

উত্তর আরবের বিদ্রোহ দমনঃ

৬৩২ খ্রিঃ অক্টোবর মাসেই সিরিয়ার সিমান্তের বিদ্রোহ দমনের জন্য হযরত আমর (রাঃ) এর বাহিনীকে সিরিয়ার সিমান্তে পাঠানো হয়। তিনি এই সিমান্ত এলাকা অর্থ্যাৎ উত্তর আরবের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত হয়। এই অঞ্চলের বিদ্রোহীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বনি কালব গোত্রের শাখা গুলো। এগুলো হলোঃ তাবুক ও দুমাতুল জান্দালের কুজা এবং ওয়াদিয়া শাখা গোত্র।

ইয়ামামা যুদ্ধের পরে জানুয়ারিতে শুরাহবিল ইবনে হাসানা আসার পরে উত্তর আরবের বিদ্রোহীদের দমনে আমর সক্ষম হয়।

ইয়েমেনের বিদ্রোহ দমন

আরবে সর্বপ্রথম ইয়েমেন ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো। তখন ইয়েমেনে নেতা ছিলো আসওয়াদ যে কিনা নিজেকে নবী দাবী করেছিলো। নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়ই ফাইরুজ আল দাইলামি তাকে হত্যা করে এবং সানায় ইয়েমেনে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ওফাতের খবর শুনতে পাওয়ার পরে ইয়েমেনে দ্বীতিয় বারের মতো বিদ্রোহ হয়। এই বিদ্রোহটি হয় রিদ্দার যুদ্ধের সময়। এই বিদ্রোহীদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদেরকে ইয়েমেন থেকে বের করে দেওয়া। এই বিদ্রোহীদের ফাইরুজ ও অন্যান্য মুসলিম নেতাদের হত্যা করে মুসলমানদের মাঝে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করেছিলো। তারা মুসলিমদের মাছে অনৈক্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলো।

কিন্তু ফাইরুজ পালিয়ে যায় এবং পার্বত্য এলাকায় আশ্রয় নেয়। রিদ্দার যুদ্ধ চলাকালীন ৬৩২ সালের জুলাই মাসে এই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ছয় মাস পর্যন্ত তিনি এখানে অবস্থান করেন। পরে ইয়েমেন থেকে আসা আরো কয়েক হাজার মুসলমান তার সাথে যোগ দেয়।  নিজের অবস্থান শক্ত হওয়ার পরে ফাইরুজ লোকজনদের নিয়ে কাইসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হন।

সানায় গিয়ে তিনি সানার বিরুদ্ধে এগিয়ে যান এবং আল্লাহ তায়ালা এই মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। কাইস তার লোকদের নিয়ে আবয়ানের দিকে পিছু হটে এবং সেখানে আত্মসমর্পণ করে। পরে হযরত আবু বকর (রাঃ) এদেরকে ক্ষমা করে দেয়। এই ভাবে ইয়েমেনের বিদ্রোহ দমন হয়ে যায়।

মাহরার বিদ্রোহ দমন

হযরত আবু বকর (রাঃ) ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল কে ওমান থেকে মাহরার দিকে অগ্রসর হতে বলেন এবং আরফাজা বিন হারসামার এর সাথে যোগ দিতে বলেন যাতে মাহরায় বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করতে পারেন। কিন্তু ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল পৌছে দেখলেন সেখানে তখনও আরফাজা বিন হারসামা পৌছাতে পারিনি। এখানে ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল অপেক্ষা করার পরিবর্তে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন।

এদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে জাইরুত নামে একটি স্থানে ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল দুইটি বিদ্রোহী দলের মুখোমুখি হয়। তাদের মধ্যে ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল একটি দলকে ইসলামের গ্রহণের আহ্বান জানান। এই আহ্বান শোনার পরে সেই দলটি ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেলের সাথে যোগ দিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত হয়।

এরপরে মাহরায় ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠান করতে সক্ষম হন। আল্লাহ তায়ালা এই মুসলিম সেনাপতির উপর শান্তি বর্ষিত করুক। আমিন।

 

বাহরাইনে বিদ্রোহ দমন

বাহরাইনে যখন বিদ্রোহ দেখা দিলো তখন খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাদের দমনের জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করেন। ইয়ামামার যুদ্ধের পর খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) উলা বিন আল হাদরামি (রাঃ) এর বাহরাইনের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন।

এই অভিযানটি শুরু হয় হঠাৎ এক রাতে। সেই রাতে উলা বিন আল হাদরামি হঠাৎ আক্রমন করে বসেন। সেই যুদ্ধেই তিনি শহর অধিকার করে নেন এবং বিদ্রোহীরা পিছু হটতে থাকে। কিন্তু তারা আবার মুসলিম বাহিনীর সাথে লড়ায়ে সক্ষম হয় তবে মুসলিম বাহিনী এই যুদ্ধে বিজয়ী হন।

অধিকাংশ বিদ্রোহী আত্মসমর্পণ করে এবং ইসলামে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ৬৩৩ খ্রিঃ এর জানুয়ারী মাসে এই অভিযান শেষ হয় এবং বাহারাইনের বিদ্রোহ দমন হয়।

হাদরামাওত

ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের প্রথমে ফাইরুজ আল দাইলামি দমন করেন। তবে রিদ্দার যুদ্ধ চলাকালীন সবচেয়ে বড় বিদ্রোহীটি ইয়েমেনের পূর্ব পার্শ্বে হাদরামাওতের নাজরানের অধিবাসী কিন্দা গোত্র কর্তৃক সংঘটিত হয়েছিলো। ৬৩৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই গোত্র কোন বিদ্রোহ করেনি।

এই অঞ্চলে হাদরামাওতের মুসলিম গভর্নর ছিলন জিয়াদ বিন লুবাইদ। তিনি প্রথম এই কিন্দা গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এর ফলে কিন্দার গোত্র পরিপূর্ণভাবে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে তখনও কোন যুদ্ধ শুরু হয়নি। এর কারন ছিলো তাদের উভয়ের সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল ভারসম্য অবস্থায়। তাই তাদের যুদ্ধের কোন আগ্রহ ছিল না। বিদ্রোহী গোত্রের নেতা ছিলো আশাস বিন কাইস। জিয়াদ বিন লুবাইদ সৈন্য সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করেন।

পরে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) জিয়াদ বিন লুবাইদের সাহায্যের জন্য কমান্ডার মুহাজির বিন আবি উমাইয়াকে পাঠান। তিনি প্রথমে নাজরানের কিছু বিদ্রোহ গোত্রকে দমন করে। পরে তিনি খলিফার আদেশ অনুযায়ী জিয়াদ বিন লুবাইদের সাথে যোগ দেন এবং তার পরে ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেলও মুসলিম বাহিনীতে যোগ দেন।

৬৩৩ সালের জানুয়ারি মুহাজির ও জিয়াদের সেনারা হাদরামাওতের রাজধানীতে মিলিত হয়। এর পরে তারা আশাসের বাহিনীকে পরাজিত করে এবং আশাস নুজাইরের দূর্গের দিকে পিছু হটে শহরের দিকে চলে যায়। এই যুদ্ধের পরেই জিয়াদ এবং মুহাজিরের কাছে ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহেল পৌছান এবং যুদ্ধে যোগদেন। এর পরে তিনটি মুসলিম বাহিনী মুহাজির কমান্ডারের নেতৃত্বে তিনটি মুসলমান সেনাদল নুজাইরের দিকে অগ্রসর হয় এবং শহর অবরোধ করা হয়। পরে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নুজাইর মুসলিম বাহিনীর অধিনে আসে।

এর মাধ্যমে আরবে ধর্মদ্রোহীদের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং পুরো আরব উপদ্বীপ মুসলিমের ছায়াতলে আসে। ৬৩২ খ্রিঃ ১৮ই মার্চ হিজরি ১২ সনে রিদ্দার যুদ্ধ শেষ হয় এবং পুরো আরব খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর অধীনে চলে আসে। এটি ছিলো মুসলমানদের একটি রাজনৈতিক এবং সামরিক বিজয়।

এই যুদ্ধের পরে মুসলিম বাহিনী সামরিক ভাবে দক্ষতা অর্জন করেন এবং তারা বাইরের দিক মনোনিবেশ করেন। এই যুদ্ধের পরে মুসলিমরা বাইজেন্টাইন এবং পারস্য সম্রাজ্যের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ শহর ও প্রদেশে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম হন। পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লহ।

 

No comments:

Post a Comment